Wellcome to National Portal
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ১৬ নভেম্বর ২০২৪

ঢাকা নগর কর্তৃপক্ষের ইতিহাস

বুড়িগঙ্গা নদীতীরে অবস্থিত প্রায় সাতশত বছরের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বন্দর নগরী ঢাকা। মোঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে ১৬০৮ সালে ঢাকায় রাজধানী স্থাপিত হলে বিশ্বব্যাপী এ নগরীর মর্যাদা ও গুরুত্ব বেড়ে যায়। বাংলার সুবেদার ইসলাম খান ঢাকার উন্নয়নে মনোনিবেশ করেন। গড়ে ওঠে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও অট্রালিকা। নগরবাসীর কল্যাণে মোঘল সুবেদারগণ উল্লেখযোগ্য কিছু কাজ করেন। এসময় তারা চকবাজার থেকে সূত্রাপুর লোহারপুল পর্যন্ত প্রায় ৪ কি. মি. দীর্ঘ ইটের রাস্তাও নির্মাণ করেন। এমনকী শৌর্যবীর্যের দিক দিয়ে ঢাকা পৃথিবীর ১২তম অবস্থানে ছিল। ১৭৫৭ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বাংলার শাসনভার গ্রহণ করার পর ঢাকা নগরীর উন্নয়ন ব্যহত হয়। কোম্পানী নগরবাসীর কোন সুযোগ সুবিধা না করে লুণ্ঠনে ব্যস্ত থাকে। এভাবেই চরম অব্যবস্থাপনা অতিবাহিত হয় কিছু সময়।

মোঘল আমলে শহরের প্রশাসনিক কাজকর্ম যেমন: শান্তিরক্ষা, স্বাস্থ্যবিধি ও নৈতিক মানরক্ষা ইত্যাদি দায়িত্ব ছিল সরকারের। ১৭৭২ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর পুনর্বিন্যাসের ফলে শহরের প্রশাসনের কর্মকর্তা মনোনীত হন একজন ইউরোপীয় ম্যাজিস্ট্রেট। ১৮১৩ সালে ম্যাজিস্ট্রেট জেমস ওল্ডহ্যামের অনুরোধে সরকার গঠন করে ‘কমিটি ফর দি ইমপ্রুভমেন্ট অব দি সিটি অব ঢাকা অ্যান্ড আদার প্লেসেস ইমিডিয়েটলি অ্যাডজাস্ট টু দি সিটি।
১৮২৩ সালে নগর উন্নয়নে গঠন করা হয় কমিটি অব ইমপ্রূভমন্ট। এই কমিটি উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন কাজ করে। ১৮২৯ সালের নভেম্বরে কমিটি বিলুপ্ত সাধিত হয়। এর পরিবর্তে সরকার ১৮৪০ সালে ‘ঢাকা কমিটি’ নামে একটি কমিটি গঠন করেন। ঢাকা কমিটি ১৮৪০ থেকে ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কী কী কাজ করেছিলেন তা জানা যায়নি।
অবশেষে ১৮৬৪ সালের ১লা আগষ্ট ঢাকা পৌরসভা স্থাপিত হয়। ‘ঢাকা মিউনিসিপ্যাল ইমপ্রুভমেন্ট অ্যাক্ট’ বলে আগস্ট মাসে গঠন করা হয় ‘ঢাকা মিউনিসিপ্যাল কমিটি’। ১৮৬৪ সালের পূর্ব পর্যন্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পদাধিকার বলে মিউনিসিপ্যালিটির সভাপতি ছিলেন। ভাইস চেয়ারম্যান নিয়োগ করতেন লেফটেন্যান্ট গভর্নর, ডিভিশনাল কমিশনার, ম্যাজিস্ট্রেট, নির্বাহী প্রকৌশলী ও সিভিল সার্জন ছিলেন পদাধিকার বলে সভাপতি। কমিশনারের সংখ্যা ছিল ১৪ থেকে ২৩ পর্যন্ত। ব্রিটিশ আমলে ঢাকা পৌরসভায় ১৫ জন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে প্রথম তিনজন বাদে বাকি ১২ জন ছিলেন কমিশনারদের ভোটে নির্বাচিত। দুজন দুইবার  করে দায়িত্ব পালন করেন। পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন  যথাক্রমে  তৎকালীন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মি. স্কিনার এবং ঢাকা কলেজের শিক্ষক জর্জ বিলার্ট। ১৮৮৪ সাল পর্যন্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পদাধিকারবলে এ নিয়োগ পেতেন। ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটির প্রথম তিন চেয়ারম্যান মি. স্কিনার, ড. লাইয়্যাল এবং জে ব্রাডব্যারিকে নিয়োগ দেন ব্রিটিশ বাংলার গভর্নর। একটি কমিটির মাধ্যমে তাঁরা ঢাকার সেবা ও প্রশাসনব্যবস্থা তদারক করতেন। ঢাকা পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান হন জনাব আনন্দ চন্দ্র রায় চৌধুরী । অবশ্য প্রত্যক্ষ নয়, তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন কমিশনারদের ভোটে। ১৮৮৪ সালে নির্বাচিত ওয়ার্ড কমিশনারদের প্রথম সভা বসে। অনেকেই ভেবেছিলেন সভায় তৎকালীন ঢাকার ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট ফ্রেজরিক ওয়ারের নামই প্রস্তাবিত হবে চেয়ারম্যান বা সভাপতি হিসেবে। কিন্তু নির্বাচিত কমিশনার সৈয়দ গোলাম মোস্তফা চেয়ারম্যান হিসেবে আনন্দ চন্দ্রের নাম ঘোষণা করেন এবং বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিনি নির্বাচিত হন। তিনি দায়িত্ব পালন করেন ১৮৮৫ থেকে ১৮৮৮ সাল পর্যন্ত। আনন্দ চন্দ্র রায় আইনজীবী ছিলেন। তাঁর নামানুসারে একটি রাস্তার নাম রাখা হয় আনন্দ চন্দ্র রায় রোড। আরমানীটোলায় তাঁর বাসভবনেই প্রতিষ্ঠা করা হয় আনন্দময়ী স্কুল। প্রথম নির্বাচিত সহসভাপতি বা ভাইস চেয়ারম্যান হন খাজা আমিরুল্লাহ। প্রথম নির্বাচিত কমিশনার ছিলেন রমাকান্ত নন্দী, ডা. কুম্বি, ডা. পি কে রায়, গোপী মোহন বসাক, ঈশ্বরচন্দ্র দাস এবং পূর্ণচন্দ্র ভূঁইয়া। এরপর কমিশনারদের ভোটে ঢাকা পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন ঈশ্বরচন্দ্র দাস (১৮৮৮-১৮৯১), খাজা মোহাম্মদ আসগর (১৮৯১-১৮৯৪), ঈশ্বরচন্দ্র শীল (১৮৯৪-১৮৯৯), নবাব খাজা মোহাম্মদ ইউসুফ খান বাহাদুর আসগর (১৮৯৯-১৯০১), জে টি র‌্যানকিন (১৯০১-১৯০৫), নবাব খাজা মোহাম্মদ ইউসুফ খান বাহাদুর আসগর (১৯০৫-১৯১৬), রায় বাহাদুর প্যারিলাল দাস (১৯১৬-১৯২০), রায় বাহাদুর সত্যেন্দ্রনাথ কুমার দাস (১৯২০-১৯২৪), খাজা নাজিমুদ্দীন (১৯২৪-১৯২৮) সতীশচন্দ্র সরকার (১৯২৮-১৯৩২), রায় বাহাদুর সত্যেন্দ্র কুমার দাস (১৯৩২-১৯৩৬), বীরেন্দ্রনাথ বোস (১৯৩৬-১৯৪০) এবং বিমলা নন্দা দাস গুপ্ত (১৯৪০-১৯৪৭)।
১৮৮০ থেকে ১৯০১ সালের মধ্যে ঢাকার নবাব ও অন্যান্য ধনাঢ্য ব্যক্তির সহায়তায় ঢাকা পায় পরিশ্রুত পানি ও বৈদ্যুতিক আলো। পানি ও বিদ্যুতের ক্ষেত্রে পৌরসভা অগ্রাধিকার দিয়েছিল অভিজ্ঞ এলাকাগুলোতে। পৌরসভার পাশাপাশি ছিল নবাবদের নিয়ন্ত্রিত পঞ্চায়েত। মহল্লার পঞ্চায়েত প্রধান নির্বাচিত হত সমাজের বিত্তবানরা। তাদের প্রধান কাজ ছিল সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষা করা। ঢাকা পৌরসভার জন্যে নতুন অ্যাক্ট ১৯৩২ সালে প্রবর্তিত হয়। এ অ্যাক্ট দেশ বিভাগ পর্যন্ত অর্থাৎ ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত চালু ছিল। 

১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট পাকিস্তান অর্জনের সাথে সাথে ঢাকা শহরকে করা হলো তদানিন্তন পূর্বে পাকিস্তানের রাজধানী। প্রাদেশিক রাজধানীর পদমর্যাদা পাওয়ার পর থেকেই ঢাকার গুরুত্ব বেড়ে যায়। তাই এ শহরকে পুনবিন্যাসের প্রয়োজন অপরিহার্য হয়ে পড়ে। ১৯৪৭ সালের শেষের দিকে সরকার ঢাকা পৌরসভা বাতিল ঘোষণা করে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত পৌরসভায় কোন নির্বাচন হয়নি। এ সময়ে সরকার মনোনীত ব্যক্তিবর্গই ঢাকা পৌরসভার কাজ পরিচালনা করতেন। ১৯৬০ সালে সরকার মিউনিসিপ্যাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অর্ডিন্যান্স জারি করেন। এই অর্ডিন্যান্স বলে নির্বাচিত চেয়ারম্যানের স্থলে সরকারি পদস্থ কর্মকর্তাকে মনোনয়নদানের আদেশ করা হয়। তবে ভাইস চেয়ারম্যান পদটি নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মধ্যে থেকেই নির্বাচনের বিধি বলবৎ থাকে। ঢাকা পৌরসভা পূর্বে সাতটি ওয়ার্ডে বিভক্ত ছিল। পাকিস্তান আমলে ১৯৬০ সালে সরকার এই পৌরসভার ২৫টি ই্উনিয়নকে ৩০টি ইউনিয়নে বিভক্ত করে এবং ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের ঢাকা পৌরসভার সদস্য পদ দান করে। তাছাড়া বেশ কিছুসংখ্যক সরকারি ও বেসরকারি ব্যক্তিকে মনোনীত কমিশনার বা সদস্য করা হয়। ১৯৪৭ থেকে  ১৯৭১ পর্যন্ত ঢাকা পৌরসভার চেয়ারম্যান পদে মনোনীত বা অনির্বাচিতরাই  দায়িত্ব পালন করেন তাঁরা হচ্ছেন পানাউল্লাহ আহমেদ (১৯৪৭-১৯৪৯), কাজী গোলাম আহাদ (১৯৪৯-১৯৫১), আবুল খায়ের (১৯৫১-১৯৫৩), কাজী মোহাম্মদ বশীর (১৯৫৩-১৯৫৮), এ এ সিদ্দীক (১৯৫৮-১৯৫৯), শামসুল হক (১৯৫৯-১৯৫৯), এইচ এইচ নোমানী (প্রশাসক, ১৯৫৯-১৯৬০), কর্নেল জামশেদ খান (১৯৬০-১৯৬৩), তোফাজ্জেল হোসেন (১৯৬৩-১৯6৪), আবুল খায়ের (অফিসার ইনচার্জ, ১৯৬৪-১৯৬৪), মইন উদ্দিন আহমেদ (১৯৬৪-১৯৬৭), মো. খুরশীদ আনোয়ার (১৯৬৭-১৯৬৮), বদিউল আলম ( ১৯৬৮-১৯৬৯) এবং মেজর (অব.) এ এস খানসুর (প্রশাসক, ১৯৬৯-১৯৭১)।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী হিসেবে ঢাকা শহরের গুরুত্ব অনেকাংশে বৃদ্ধি পায় এবং সরকার কর্তৃক পৌর সংস্থাগুলোর প্রাচীন রীতি অনুসারে পরিচালনার আনুষ্ঠানিক বিলুপ্তি ঘোষণা করা হয়। ১৯৭১ সালে রাষ্ট্রপতির ৭ নম্বর আদেশ অনুসারে এগুলোর প্রতিটিতে সরকারি প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। ১৯৭৩ সালে রাষ্ট্রপতির ২২ নম্বর আদেশ অনুসারে পৌরসভাগুলোতে সামান্য পরিবর্তন আনা হলেও এগুলোর কার্যাবলি প্রায় আগের মতোই থাকে। স্বাধীনতার পর ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত চারজন প্রশাসক দায়িত্ব পালন করেন। তাঁরা হচ্ছেন খালেদ শামস, মঞ্জুরুল করিম, এইচ এন আশিকুর রহমান ও লে. কর্নেল (অব.) হাশেম উদ্দিন আহমেদ।
১৯৭৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকা নগরীকে ৫০টি ওয়ার্ডে বিভক্ত করে নির্বাচনের মাধ্যমে ঢাকা পৌরসভা গঠন করা হয়। ১৯৭৭ সালের ৩১ অক্টোবর কমিশনারদের মাধমে ঢাকা পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন ব্যারিস্টার আবুল হাসনাত। (৩১-১০-৭7 থেকে ৮-১০-৭৮ পর্যন্ত)। ১৯৭৮ সালে ঢাকা পৌরসভাকে ঢাকা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনে উন্নীত করা হয় পৌরসভার চেয়ারম্যান ঢাকা মিউিনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের মেয়র নামে অবিহিত হয়। এটা ছিল ঢাকা নগরবাসীদের বহুদিনের আশা আকাঙ্খার বাস্তব রূপায়ণ। এই সময় ৫০ জন নির্বাচিত কমিশনারসহ ৫ (পাঁচ) জন মনোনীত কমিশনার থাকার বিধান ছিল। এ করপোরেশনের মেয়র পদে ব্যারিস্টার আবুল হাসনাত বহাল থাকেন ১৯৮২ সালের ৯ মে পর্যন্ত। ১৯৮২ সালে মিরপুর এবং গুলশাল পৌরসভাকে বিলুপ্ত করে ঢাকা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের সাথে একীভূত করা হলে এর আয়তন ও দায়িত্ব বৃদ্ধি পায় এবং ঢাকা নগরী ঢাকা মহানগরীতে রূপান্তরিত হয়। এর ফলে ওয়ার্ডের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৬টি। ১৯৮৩ সালে ঢাকা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের আয়তন, জনসংখ্যা ও দায়িত্ব ক্রমশয়ে বৃদ্ধিজনিত কারণে ওয়ার্ডের সংখ্যা ৭৫টিতে উন্নীত হয়। ১৯৮৩ সালে ‘ঢাকা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন অর্ডিন্যান্স’ নামে একটি স্বতন্ত্র অর্ডিন্যান্স জারি করে সরকার। এতে ৭৫ জন নির্বাচিত কমিশনার, ১০ জন মনোনীত নারী কমিশনার এবং পাঁচজন সরকারি কমিশনার রাখার বিধান ছিল। অর্ডিন্যান্সের বিধি-বিধান এবং এর অধীন প্রণীত আইন অনুসারে কমিশনাররা প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হতেন। নির্বাচিত কমিশনারদের মধ্য থেকে একজনকে মেয়র এবং তিনজনকে ডেপুটি মেয়র হিসেবে বাছাই করা হতো। মেয়র এবং ডেপুটি মেয়ররা করপোরেশনের কমিশনার হিসেবেও গণ্য হতেন। কমিশনারদের কার্যকালের মেয়াদ ছিল পাঁচ বছর। আবুল হাসনাতের পর ১৯৮৯ সালের অক্টোবর পর্যন্ত দুজন করপোরেশনের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পান। তাঁরা হচ্ছেন মেজর জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হাসান ও কর্নেল (অব.) এম এ মালেক। ১৯৮৯ সালের ৯ অক্টোবর থেকে ১৯৯০-এর ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত মো. নাজিউর রহমান মঞ্জু মনোনীত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। 
১৯৯০ সালে ঢাকা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের নাম পরিবর্তন করে ঢাকা সিটি করপোরেশন নামকরণ করা হয় এবং জনসেবার মান ও কার্যক্রম উন্নত ও গতিশীল করার লক্ষ্যে ঢাকা মহানগরীকে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে ১০টি আঞ্চলিক কার্যাালয়ে বিভক্ত করা হয়।ব্যারিস্টার আবুল হাসনাত সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র (মনোনীত) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯০ সালের ৩ ডিসেম্বর থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি এ পদে ছিলেন। এরপর পদাধিকারবলে মেয়র হিসেবে অলিউল ইসলাম দায়িত্ব পালন করেন ১৯৯১ সালের ৫ মে পর্যন্ত। ১৯৯১ সালের ১৯ মে থেকে ১৯৯৩ সালের ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত মনোনীত মেয়র হিসেবে নগরপ্রধানের আসনে ছিলেন মির্জা আব্বাস। পদাধিকারবলে বদিউর রহমান দায়িত্ব পালন করেন ১৯৯৪ সালের ১০ এপ্রিল পর্যন্ত। 
১৯৯৩ সালে ‘ঢাকা সিটি করপোরেশন (সংশোধনী) আইন, ১৯৯৩’ জারি করা হয়। এ আইনে মেয়র এবং কমিশনাররা প্রাপ্তবয়স্কদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হওয়ার বিধান হয়। এতে আরো বিধিবদ্ধ হয়, নারী কমিশনারদের আসনসংখ্যা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হবে এবং ওই সব আসন শুধু নারীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে এবং নারী কমিশনাররা মেয়র ও কমিশনারদের মাধ্যমে সরকার নির্ধারিত পদ্ধতিতে নির্বাচিত হবেন। নতুন আইনে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৪ সালে এবং ভোটারদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন মোহাম্মদ হানিফ। তিনি ২০০২ সালের ৪ এপ্রিল পর্যন্ত টানা আট বছর দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে ১৯৯৯ সালে সংরক্ষিত ৩০টি আসনে নারী কমিশনারদের প্রত্যক্ষ নির্বাচনের বিধান প্রবর্তন এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড সংখ্যা ৯০টিতে উন্নীত করা হয়। অবিভক্ত ঢাকা সিটিতে ভোটারদের প্রত্যক্ষ ভোটে দ্বিতীয় মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন সাদেক হোসেন খোকা। তিনি ২০০২ সালের ৫ এপ্রিল থেকে ২০১১ সালের ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯ বছরের বেশি সময় দায়িত্ব পালন করেন।
১৮০১ সালে নগরীর জনসংখ্যা ছিল মাত্র দুই লাখ এবং ১৮৪০ সালের মধ্যে তা ক্রমেই কমে গিয়ে দাঁড়ায় ৫১ হাজার ৬৩৬ জনে। ১৮০১ সাল থেকে ১৮৪০ সালের মধ্যে পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব দিকে ঢাকার নিকটবর্তী ঘনবসতিপূর্ণ বহু এলাকা, যেমন নারিন্দা, ফরিদাবাদ, উয়ারী ও আলমগঞ্জ অনেকাংশেই পরিত্যক্ত হয়ে যায়। ১৯০৫ থেকে ১৯১১ সালের মধ্যে ঢাকার প্রশাসনিক গুরুত্ব নাটকীয়ভাবে আবারও বৃদ্ধি পায়, যখন এটিকে পূর্ব বাংলা ও আসাম নামে নতুন একটি প্রদেশের রাজধানী করা হয়। এর সঙ্গে সঙ্গে তার জনসংখ্যাও বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। পরবর্তী সময়ে পাকিস্তান আমলেও এই বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকে। ১৯৪৭ সালে ঢাকার লোকসংখ্যা ছিল মাত্র ২ লক্ষ ৯৫ হাজার। ১৯৫১ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ লক্ষ ৩৫ হাজার ৯২৮ জনে। এরপর ১৯৬১ সালে ৫ লক্ষ ৫০ হাজার ১৪৩ জন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী ১৯৭০ সালের ঢাকার জনসংখ্যা ছিল প্রায় ১৮ লাখ, ১৯৮১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ৪০ লাখ ২৩ হাজার ৮৮৩ জনে। ১৯৯১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী রাজধানীর লোকসংখ্যা দাঁড়ায় ৬৮ লাখ ১১ হাজার ৬৪২ জনে। ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ঢাকার জনসংখ্যা ৮৩ লাখ ৭৮ হাজার ৫৯ জন। ২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের জনসংখ্যা ছিল ৩৮,৮৩,৪২৩ জন এবং ২০২২ সালের জনশুমারী অনুযায়ী ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের জনসংখ্যা ৪২,৯৯, ৩৪৫ জন। 

নগরবাসীর সেবা সহজলভ্য করার বৃহত্তর স্বার্থে ২০১১ সালের ২৩ নভেম্বর স্থানীয় সরকার সংশোধনী বিল-২০১১ অনুসারে সরকার ঢাকা সিটি করপোরেশনকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে। এ আইন অনুযায়ী ২০১১ সালের ৪ ডিসেম্বর থেকে ঢাকা সিটি করপোরেশনকে দুটি প্রশাসনিক অঞ্চলে বিভক্ত করার ঘোষণা দেওয়া হয়। এর ফলে ২০১২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন যাত্রা শুরু করে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন পাঁচটি অঞ্চল ও ৫৭টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত হয়। আইনী জটিলতার কারণে যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি।  বিভক্ত দুই সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল। এই ভোটে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন জনাব মোহাম্মদ সাঈদ খোকন।
 
প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) ৯ মে, ২০১৬ তারিখে অনুষ্ঠিত সভার গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আয়তনে পরিবর্তন আসে, ঢাকার প্রান্তের ৮টি ইউনিয়নের সমন্বয়ে ১৮টি ওয়ার্ড গঠন করে সরকার। বর্তমানে ঢাকা দক্ষিণের মোট ওয়ার্ড সংখ্যা ৭৫টি।  ২০২০ সালের নির্বাচনের তথ্য অনুযায়ী ঢাকা দক্ষিণের মোট ভোটার ছিল ২৩ লাখ ৬৭ হাজার ৪৮৮ জন।
পহেলা ফেব্রুয়ারি ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। ১৬ মে ২০২০ সালে  তিনি মেয়র হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। 

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভূত্থানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পলায়ন করলে ১৯ আগস্ট ২০২৪ সালে ‘স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’  এর ধারা ১৩ ক প্রয়োগ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস কে অপসারণ করা হয়। 
১৯ আগস্ট ২০২৪ তারিখে স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’  এর ধারা ২৫ ক এর উপধারা (১) প্রয়োগ করে স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. মহঃ শের আলী কে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়। 
২৩-০৯-২০২৪ তারিখে ‘স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’  এর ধারা ২৫ ক এর উপধারা (১) প্রয়োগ করে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জনাব মোঃ নজরুল ইসলাম কে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়।
২৬-০৯-২০২৪ তারিখে ‘স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’  এর ধারা ১৩ ক প্রয়োগ করে  প্রজ্ঞাপন জারীর মাধ্যমে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলরগণকে (সংরক্ষিত আসনসহ) স্ব স্ব পদ হতে অপসারণ করা হয়।
২৬-০৯-২০২৪ তারিখে স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক প্রজ্ঞাপন জারীর মাধ্যমে ‘স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন)(সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’  এর ধারা ২৫ (ক)(২) মোতাবেক সরকার কর্তৃক পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সার্বিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার লক্ষ্যে মাননীয় প্রশাসককে সভাপতি এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে ২৫ সদস্য বিশিষ্ট ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়।

সর্বশেষ হালনাগাদকরণ: ১০/১০/২০২৪ খ্রি.